লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম...পেয়াজ,তেল,সবজী, মুরগি।

তেল,পেয়াজ,মুরগি,সবজী


















 বাজারে তেল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সবজি, মুরগি সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। গত এক মাস ধরেই দফায় দফায় বাড়ছে ব্রয়লার ও কক জাতের সোনালি মুরগির দাম। এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ। তেলের দামও চড়া। অপরদিকে, ৪০ টাকার কেজির নিচে কোন ধরনের সবজিই নেই। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে মোটা চালের দাম বাড়ার কথাও জানিয়েছে।

এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা বাজারের তালিকা বারবার কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর ও কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার এ তথ্য পাওয়া যায়। গত এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ গত সপ্তাহে তা যথাক্রমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও ৪০ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু হঠাত্ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?

এ প্রসঙ্গে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টির ফলে পেঁয়াজের উত্পাদন কম হয়েছে। সে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা বুকিং রেট বাড়িয়েছে। আর যেসব পেঁয়াজ ভারত রপ্তানি করছে সেগুলো অপরিপক্ক হওয়ায় রাস্তায় বেশির ভাগ পঁচে যাচ্ছে। এছাড়া সামনেই দুর্গাপূজা। তখন ছুটির সময় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ রাস্তায় আটকে যেতে পারে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় আমরা আমদানি কম করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূজা শেষে পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে বলে আশা করছি।

ব্রয়লার মুরগি

নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে মাংস বলতে যে ব্রয়লার মুরগি তার দাম গত এক মাস ধরেই চড়া। টিসিবির হিসেবে, গত এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর গত বছর এই সময় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১১৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। কক জাতের সোনালি মুরগিরও এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বাড়তি। গতকাল বাজারে প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়। যা একমাস আগেও ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর সভাপতি মসিউর রহমান গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পোলট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। এছাড়া করোনার সময় চাহিদা কমে গিয়েছিল, এখন চাহিদা বেড়েছে।

কমছেই না তেলের দাম


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দর বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ভোজ্য তেলের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১০ টাকা বেড়ে ৬৮০ থেকে ৭৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর সুপার পামঅয়েলে লিটারে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকায়। তবে এক লিটারের বোতলজাত ও খুচরা সয়াবিনের দাম বাড়েনি। বর্তমানে খুচরা বাজারে এক লিটারের বোতজাত সয়াবিন ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

বাড়ল মোটা চালের দাম

বেড়েছে মোটা চালের দাম। কেজিতে ২ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৭ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। তবে সরু ও মাঝারিমানের চালের দাম বাড়েনি। বর্তমানে বাজারে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট মানভেদে ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা ও মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাগালের বাইরে সবজি

সবজির দাম এখন বলতে গেলে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টম্যাটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া বাজারে আসা শীতকালীন আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ( আকারে ছোট) ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

সবজির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা বেলায়ের হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে অনেক সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে শীতকালীন আগাম সবজি পুরোপুরি ওঠা শুরু করলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছি।

Post a Comment

0 Comments