সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
বিএনপিকে কারা কেন কোন সুখে ভোট দেবে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির দুই মেয়াদের শাসনামলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরপরও কারা, কেন ও কোন সুখে বিএনপিকে ভোট দেবে? বিএনপি মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য কী করেছে? নির্বাচনে জেতার আত্মবিশ্বাস বিএনপির মধ্যে নেই। নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেই তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
গতকাল সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সম্পর্কেও তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে এ দেশে ভয় পাওয়ার কিছু নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা তার সরকার রাখে। তবে সচেতন থাকতে হবে। আর আফগানিস্তানের বাতাস কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে, সে জন্য সরকার যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে।
জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে তার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতেই এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাংবাদিকরা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
এ সময় গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ ছাড়া উভয় প্রান্তে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
করোনাকালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দু'বছর পর বিদেশ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। তার বিদেশ সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনও অনেক দিন পর হওয়ায় সাংবাদিকরা সমসাময়িক অনেক বিষয়েই তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান ও বৈশ্বিক মহামারি করোনা ইস্যুও উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীও তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এবং খোলামেলাভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনটি আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে।
'জনগণ কাকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগের বাইরে কে আছে?' :আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে প্রতিপক্ষ নেই বলে কখনোই আত্মতুষ্টিতে ভোগেন না তিনি। তিনি জনগণের সমর্থনে বিশ্বাসী, জনগণের ভোটের জন্য আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুতও রাখে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির সময় কী পেয়েছে আর আওয়ামী লীগের সময় কী পেয়েছে- সেটার তুলনা করতে হবে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ আর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মানুষ কী পেয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর সরকারসহ আওয়ামী লীগ আমলে মানুষ কী পেয়েছে- সে তুলনা করে বিবেচনা করেন। জনগণ কাকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগের বাইরে আর কে আছে?
তিনি বলেন, বিএনপি জানে- নির্বাচনে জিততে পারবে না। একটা দল কীভাবে জিতবে? তাদের নেতৃত্ব কোথায়? একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশান্তরী। বিএনপি তাদের নেতৃত্বে রেখেছে। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে? তারা তো নির্বাচনও করতে পারবেন না। এর ফল হচ্ছে, বিএনপি যে নির্বাচনে জিতবে বা যেতে পারে- এই বিশ্বাস তাদের নেই। তারা জানে- তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই তাদের এত ক্ষোভ।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার মধ্যেও ভোটাররা নির্বাচনগুলোতে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচন যেন ঠিকভাবে না হয়, মানুষ যেন অংশ না নেয়, সে জন্য অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে হেন কোনো কাজ নেই, যা করা হয়নি। তারপরও নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল বলেই এত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনো অভিযোগ করে না- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনে তারা জিততে পারেনি কেন? তখন প্রশ্ন তোলেনি কেন? এরপর যত নির্বাচন হয়েছে, মানুষ তো ভোট দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে গেলাম; সেই ইভিএম নিয়েও প্রশ্ন। নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা নেই; তাই যেভাবেই হোক সেটাকে বিতর্কিত করা, মানুষের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি করা, মানুষের ক্ষতি করা- এগুলোই তাদের চেষ্টা। এ প্রসঙ্গে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলের সন্ত্রাস-দুর্নীতি, লুটপাট ও নৈরাজ্যের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
0 Comments